বাংলার সেরা ৫ টি বারোমাসি ফুল ফোটে

    

                 

 আপনি কি বারোমাসি ফুলের কথা ভাবছেন। এ আর্টিকেল এমন কিছু জনপ্রিয় এবং সহজ পালনযোগ্য বারোমাসি ফুল গাছ নিয়ে আলোচনা করব ,যেগুলো আপনার বারান্দা, ছাদ বা বাগান সৌন্দর্য রঙের ছোঁয়া এনে দিতে পারে। ফুল একটি প্রকৃতির অনন্য উপহার তো অধিকাংশ ফুল গাছ নির্দিষ্ট ঋতুতে ফোটে এবং তা এক সময় ঝযারে য় ।

বাংলার-সেরা- ৫টি-বারোমাসি-ফুল-ফোটে



কিন্তু কিছু কিছু ফুল গাছ আছে যেগুলো সারা বছরের কম বেশি ফুটে ।বারোমাসি ফুল গাছগুলো বিশেষ করে বাড়ির চারপাশে কে যেমন করে তুলে রঙিন ও প্রাণবন্ত। যেগুলো বাগান প্রেমিকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য আশীর্বাদ।

বারোমাসি ফুল পরিচিতিঃ

বছরে কোন সময় কোন না কোন ফুল ফোটে। কিন্তু কোন নিদ্রিষ্ট সময়ে ফুল ফুটে আবার ঝরে যায়। আসুন  বারোমাসি ফুল ফোটে এমন কিছু ফুল এর  সাথে আপনাদের পরিচিতি করে দিই।
  • জুই 
  • জবা
  • টগর
  • রঙ্গণ
  • বেলি
  • গন্ধরাজ
  • বাগান বিলাস
  • নয়নতারা
ইত্যাদী আরো অনেক বারোমাসি ফুল রয়েছে সে সম্পর্কে আমরা পরে জানব নিচে কয়েকটি পরিচিত জেনে নিই।

জুঁই ফুলের পরিচিতিঃ

জুঁই ফুল বৈজ্ঞানিক নাম(Jasminum auriulatum) এটি সুগন্ধ যুক্ত সাদা ফুল যা মূলত বাংলাদেশ এর মানুষের পরিচিত। এটির অনেক নাম রয়েছে তবে জুঁই  নামে পরিচিত। জুই উৎপত্তিস্থল  বাংলাদেশ,ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা। জুই একটি লতাজাতীয় বা গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ এর পাতা গাড়ো সবুজ ও ডিম্বাকার। জুই ফুল সাধারণত ছোট সাদা রংঙের  তীব্র সুগন্ধযুক্ত।এটি একটি বারো মাসি ফুল। বাগানের সোভা বর্ধনের জন্য লাগানো হয়।

ফুলের বৈশিষ্ট্যঃ

  • ফুল সাদা পাঁচটি বা ছয়টি পাপে যুক্ত।
  • রাতের বেলায় বা সকালে ফোটে।
  • ফুল মিষ্টি ঘ্রাণ থাকে এর  ঘ্রান অনেক দূর থেকে পাওয়া যায়।
  • এর সুন্দর  ও মনমুগ্ধকর  তীব্র ঘ্রাণের কারণে এখান থেকে আতর, পারফিউম তৈরি করা হয়।
  • এটি বছরের বারোমাস কমবেশি ফোটে।

জুঁই ফুল এর চাষাবাদ ও পরিচর্যা ঃ

  • জুঁই ফুল সাধারণত বাগানের সৌন্দার্যের জন্য রোপন করা হয়।
  • বারোমাসি ফুল বলে এটি বাগানে  লাগানো হয় বেশিরভাগ সময়।
  • এটি প্রায় সারা বছরে বারোমাসি ফুল ফুটে থাকে।
  • ফুল দিয়ে মালা ও পূজার সামগ্রী তৈরি করা হয়।
  • উষ্ণ ও আদ্র আবহাওয়ায় দুই ফুল চাষের জন্য উপযোগী।
  • রোদ যুক্ত স্থানে ভালো জন্মায় তবে ও আংশিক ছায়াসহ করতে পারে।
  • এর তীব্র গন্ধ থাকায় পোকামাকড় আক্রমণ হয়েথাকে 
  • মাঝে মাঝে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়।
  • অল্প পরিমাণে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে গাছ সতেজ থাকে এবং ভালো ফুল পাওয়া যায়।

রঙ্গন ফুল পরিচিতিঃ

 রঙ্গণ ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম(Lxora coccinea) এটি ঝোপ জাতীয় গাছ এর পাতা সবুজ লম্বাকৃতির এর লাল ফুটে অপূর্ব সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। সবুজ পাতার মধ্যে দেখতে অপরূপ শোভা বর্ধন করে। এটিও  একটি বারোমাসি ফুল।রঙ্গণ ফুল বিভিন্ন রঙের দেখা যায় সাধারণত বাংলাদেশ চার ধরনের রঙ্গন ফুল দেখা  এর মধ্যে 
  • লাল রঙ্গন 
  • কমলা রঙ্গন 
  • হলুদ রঙ্গন 
  • গোলাপি রঙ্গন 
এছাড়া বর্তমানে হাইব্রিড জাতের বিভিন্ন রঙের রঙ্গন দেখা যায়।

রঙ্গন ফুলের চাষাবাদ ও পরিচর্যাঃ

    রঙ্গন ফুল চাষে বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় বা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। অল্প পরিচর্যায় রঙ্গন ফুল বেশ ভালোভাবে চাষ করা যায়। রঙ্গন ফুল চাষের জন্য বেলে দো্মআশমাটি উপযোগী স্থানে রঙ্গন ফুল ভালো জন্মায় তবে হালকা ছায়া স্থানেও জন্মায়। চারা লাগানোর পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে ফুল ফুটে শীতের শেষে গ্রীষ্মের শুরুতে ফুল বেশি ফোটে। বছরে সারা সময় গাছে ফুল ফুটে থাকে বলে এক বারোমাসি ফুল বলে।


নয়নতারা ফুলের পরিচিতিঃ

    নয়নতারা  ফুলগাছ একটি ঝোপ জাতীয় ছোট আকারের উদ্ভীদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম(Catharanthus roseus) এটি(Apocynaceae) গোত্রের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। নয়ন তারা ফুল দেখতে গোলাপী ,সাদা, বেগুনি, হালকা লালচে দেখা যায়। এর পাঁচটি পাপড়ী থাকে এ ফুল বারোমাসি ফুলফোটে থাকে।

ফুলের বৈশিষ্ট্য:

  • নয়নতারা চিরসবুজ ও স্বল্প উচ্চতার একটি গাছ।
  • এর পাতা ডিম্বাকৃতির চকচকে এবং সবুজ।
  • নয়নতারা গাছ বছরে প্রায় পুরো সময় ফুল ফোটাতে সক্ষম।
  • বিশেষ করে গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে নয়ন তারা গাছে ফুলের সৌন্দর্য বেশি দেখা যায়।
  • এ ফুলের তেমন কোন গন্ধ নেই।

নয়নতারা ফুলের চাষ ও পরিচর্যাঃ 

গাছ মাটি ও আবহাওয়া বিশেষ করে পরিবেশের উপর নির্ভর করে না। এটি বাংলাদেশের অত্যন্ত পরিচিত জনপ্রিয় ফুল এটি সহজে জন্মাতে পারে বাড়ির উঠান, বারান্দা কিংবা ছাদের টপে সহজে নয়নতারা গাছ লাগানো যায় । নিয়মিত পানি দেওয়া এবং পর্যাপ্ত আলো পেলে নয়নতারা গাছ সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে এবং ফুল দেয়। কিন্তু তেমন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না।

বেলি ফুলের পরিচিতিঃ

বেলি একটা সাদা বর্ণের ছোট্ট সুগন্ধযুক্ত ফুল যার। বৈজ্ঞানিক নাম(Jasminum sambac) এটি আমাদের  দেশে জনপ্রিয় একটি ফুল। এর গাছ লতাযুক্ত ও সবুজ বর্ণের পাতা হয়ে থাকে খসখসে পাতা এবং লম্বায় ৪ থেকে ৫ ফিট হয়ে থাকে। ডালে থোকা থোকা আকারে ফুল হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত নেপাল শ্রীলঙ্কা থাইল্যান্ড ফিলিপাইন ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বেলিফুলের ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে ।বেলিফুল অত্যন্ত তীব্র গান মধুর ঘ্রান ও মোহনীয়।

বেলি ফুলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এটি রাতে ফুটে এবং দিনের বেলা এর সুভাষচরে থাকে তাই অনেক সময় রজনীগন্ধার সঙ্গীও বলা হয়ে থাকে।

বেলি ফুলের বৈশিষ্ট্যঃ

  • গাছ লতযুক্ত ও গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।
  • ফুল সাদা বর্ণের হয়ে থাকে।
  • ছোট ছোট অনেকগুলো পাপ ড়ি সমৃদ্ধ হয়ে থাকে।
  • গুচ্ছ আকারে ফোটে।
  • একটি থোকায় ৫-৭ দশটি ফুল ফুটে থাকে।
  • ঘ্রাণ: তীব্র মিষ্টি ও মোহনীয়।
  • তীব্র সুমধুর গন্ধ হওয়ায় এ থেকে পারফিউম ,আতর ইত্যাদি তৈরি করে থাকে।




জবা ফুলের পরিচিতিঃ

        বাংলাদেশের পরিচিত একটি  অত্যন্ত  জনপ্রিয় ফুল জবা।এর বৈজ্ঞানিক নাম(Hibiscus rosa-sinensis) জবা ফুলের গাছ মাঝারি আকারের কান্ড শাখা প্রশাখাযুক্ত হয় এর পাতা সবুজ মসৃণ। এ ফুল সকালে ফোটে সারাদিন প্রস্ফুটিত অবস্থায় থাকে সন্ধ্যার পরে একটু বন্ধ হয়ে যায়।এ ফুল মূলত লাল রঙের হলুদ সাদা গোলাপি বেগুনি কমলা রঙের দেখা যায় জবা ফুলের পাপড়ি বড় এবং মসজিদ মাঝখানে লম্বা পরাগালি থাকে বাংলাদেশের উঠানে বাগান ফুলের মাঠ মন্দিরের পাশে শহর ও গ্রামের সহজে ভুল করতে দেখা যায় ।

জবা ফুলের বৈশিষ্ট্য:

  • জবা ফুলের পাঁচটি পাপড়ি রয়েছে।
  • জবা ফুলের পাঁচটি পাপড়ির মাঝখানে একটি পড়ার নালী রয়েছে।
  • জবা ফুল বছরের প্রায় সব সময় ফোটে
  • গ্রীষ্মকাল ও বর্ষাকালে বেশি ফুল
  • একটি লাল বর্ণের বেশি হয়ে থাকে
  • একটি সাদা হলুদ বেগুনি রংয়ের ফুল দেখা যায়
  • রক্ত জমা নামে পরিচিত



জবা ফুলের চাষ ও পরিচর্যাঃ

জবা ফুল যে কোন ধরনের মাটিতে ভালো হয় তবে বেলে দোস মাটিতে জবা ফুল বেশি ভালো হয় সহ্য করতে পারে তবে ছায়াযুক্ত পরিবেশেও লাগানো যায় বাড়ির আঙিনায় স্কুলের আঙ্গিনায় মসজিদের পাশে মন্দিরের পাশে এসব ফুলের গাছ রোপন করা হয় শোভা বর্ধন ও ঔষধি কাজে এর ফুল ব্যবহার করা হয় ফুলের তেমন বেশ গন্ধ নেই। গন্ধ না থাকায় পোকার আক্রমণ তেমন হয় না খুব বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না অল্প পরিচর্যা বেশ ভালো ফল পাওয়া যায়।

বাগান বিলাস ফুলের পরিচিতিঃ

         বাগান বিলাস মূলত এক ধরনের লতা জাতীয় উদ্ভিদ। গাছের ডালপালা কাটাযুক্ত এবং দ্রুত বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় এর পাতাগুলো হালকা সবুজ এবং ডিম্বাকৃতির। তবে গাছের সৌন্দর্যের মূল উৎস হলো এর রঙিন ব্র্যাকট পাপড়ি সদৃশ পাতার মত অংশ। প্রকৃত ফুল খুব ছোট্ট এবং সাধারণত সাদা বা হলুদ অভাব হয়ে থাকে যা রাকটির মাঝখানে দেখা যায়। 
        বাংলাদেশ গ্রাম অঞ্চলে আঙ্গিনায় শহরের বাগানে কিংবা রাস্তার ধারে এক পরিচিত আকর্ষণীয় ফুলের নাম বাগান বিলাস। প্রাণবন্ত রঙে আর লতানো শাখায় মোরা এই ফুল গাছটি দ্রুত বাড়ে এবং অল্প যত্নে সাদৃশ সৌন্দর্য ছড়িয়ে দেয়।

বাগান বিলাস ফুলের রং এর বৈচিত্র্য:লাস ফুল বিভিন্ন রং এর ফোটে, যেমন -
  • গাড়ো গোলাপি
  • হালকা গোলাপি
  • কমলা
  • বেগুনি
  • সাদা
  • হলুদ
একই গাছে কখনো কখনো একাধিক রঙের র‍্যাকটো দেখা যায় যা এর সৌন্দর্যকে আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

বাগান বিলাস ফুলের চাষ ও পরিচর্যাঃ

        গাছ খুব রোদ প্রিয় খোলা জায়গায় বিশেষ করে বাড়ির উঠান বারান্দা গেটে বা দেওয়ালের গায়ে লতা তুলে দিলে খুব দ্রুত বাড়ে। অল্প পানি এবং মাঝারি উর্বর মাটিতে ভালো জন্মায় অতিরিক্ত পানি বা ছায়াযুক্ত জায়গায় গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ফুল কম ধরে এবং ফুলের আঁকা রং আসে না, এর সুগন্ধ না থাকায় তেমন কোন পোকামাকড়ের আক্রমণ হয় না এবং খুব বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। জ পানি নিশ্বাসনের ব্যবস্থা থাকা দরকার স্যাঁতস্যাতে জায়গায় ভালো হয় না অতিরক্ত পানি দেওয়া যাবেনা না

গন্ধরাজ ফুলের পরিচিতিঃ

        বাংলাদেশের এটি আরেকটি জনপ্রিয় ফুল। এর গাছ মাঝারি মাঝারি আকারের হয়ে থাকে কান্ড শাখা প্রশাখা যুক্ত দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ এর বৈজ্ঞানিক নাম(Gardenia jasminoides) এটি মূলত রুবি আছি পরিবারের অন্তর্গতএটি একটি সুগন্ধ যুক্ত ফুল যা বিশেষ করে উপমহাদেশের বাগানে সুগন্ধের জন্য খুব পরিচিত । এর অত্যাধিক গন্ধের জন্য গন্ধরাজ নামে পরিচিত বা গন্ধের রাজা বলা হয়।

গন্ধরাজ ফুলের বৈশিষ্ট্য:

  • গন্ধরাজ ফুল সাধারণত সাদা হয়ে থাকে তবে হালকা ক্রিম রঙেরও দেখা যায়
  • এ ফুলের পাপড়ি গোলাপ বা কামিনী ফুলের মতো বিন্যাস
  • গাছ মাঝারি আকৃতির হয়ে থাকে 
  • উচ্চতায় তিন থেকে ছয় ফিট পর্যন্ত হয় পাতা ঘন গাড়ো সবুজ ও  মসৃণ হয়।
  • এর ফুল সাধারণত বর্ষাকাল ও গ্রীষ্মকালে বেশি হয়।

গন্ধরাজ ফুলের চাষ ও পরিচর্যাঃ

গন্ধরাজ ফুল যেকোনো ধরনের মাটি হয় তবে বেলু দশ মাটিতে বেশি ভালো হয় যুক্ত পরিবেশ এবং পানি জমে না এরকম স্থানে চারারকম করা হয়। এটি কান্ড থেকে গাছ তৈরি করা যায় বাড়ির আঙিনা বিদ্যালয়ের আঙ্গিনা মসজিদের পাশে মন্দিরের পাশে লাগানো হয় যেমন বাংলাদেশ ভারত চীন থাইল্যান্ড ব্যাপক চাষ হয় যোগসার ব্যবহার করলে গাছ স্বাস্থ্যবান ও ফুলবহুল হয়।

শেষ কথা:

        বাংলা প্রকৃতি ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা জবা জুই গন্ধরাজ নয়ন তারা বাগান বিলাস রঙ্গণ ফুল শুধু বাগানে সৌন্দর্য বাড়ায় না বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে রাখে অনন্য প্রভাব ।জবা ফুল ধর্মীয় পূজা অর্চনায় অপরিহার্য। জুঁই ফুলের মিষ্টি সুভাষ  সুভাষ মনকে করে পরিতৃপ্ত ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

রায়আন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url